প্রকাশিত: ০৮/০৫/২০১৯ ৯:৫০ এএম

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করায় আটক হন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিঁয়াও সো উ।

এরপর ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁসের’ অভিযোগে প্রহসনের বিচারে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের আহ্বান সত্ত্বেও সাংবাদিকদের মুক্তি অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

প্রায় দেড় বছর (৫১১ দিন) বন্দি রাখার পর অবশেষে মঙ্গলবার তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, আরও আগেই মুক্তি পেতেন এ দুই সাংবাদিক।

কিন্তু বর্তমানে মিয়ানমারের সরকারপ্রধান ‘স্টেট কাউন্সেলর’ অং সান সু চির কারণেই তাদের মুক্তি বিলম্বিত হয়েছে। ওয়া লোন ও কিয়াও সো উর মুক্তিতে সহায়তার বদলে অব্যাহতভাবে বিরোধিতা করে গেছেন তিনি। কারণ এখন নিজেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চান না। মুক্তগণমাধ্যমকে এখন শত্রু ভাবেন তিনি।

সামরিক শাসনের দিনগুলোতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন সু চি। তার গৃহবন্দিত্বের সময় বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোই ছিল তার একমাত্র ভরসা।

মূলত বিদেশি গণমাধ্যমের প্রচার-প্রচারণার জোরেই ‘গণতান্ত্রিক নেত্রী’ হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর নিজেকে পুরোটাই বদলে নিয়েছেন সু চি।

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালালেও বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত এ গোষ্ঠীটির পক্ষে একটি কথাও বলেননি। বিপরীতে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে কথা বলা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের কণ্ঠ থামিয়ে দিয়েছেন।

এএফপি জানিয়েছে, সামারিক আমলে গণমাধ্যমের ওপর দমনপীড়নের যে ধারা, তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সু চির শাসনামলেই গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি দমনের শিকার হচ্ছে।

ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালেই মানহানি মামলার মতো তুচ্ছ কারণে প্রায় ২০ জন সাংবাদিকের দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড দেয়া হয়।

একই সময়ে রোহিঙ্গা গণহত্যাকালে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রায়ই ‘ভুয়া খবর’ প্রকাশের অভিযোগ আনেন তিনি। গণহত্যা সম্পর্কে বিদেশি গণমাধ্যমের যত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে সু চির সরকার নিয়ন্ত্রিত তথ্য বিভাগ।

গণমাধ্যম ও মানবাধিকার নিয়ে সু চির বর্তমান অবস্থানের কড়া সমালোচনা করে আসছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের মুক্তির প্রশ্নে কথা বলতে তার ব্যর্থতারও সমালোচনা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলছেন, ‘ওয়া লোন ও কিয়াও সো উর ব্যাপারে অব্যাহতভাবে অসহযোগিতা করে গেছেন সুচি।

সেই সঙ্গে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ব্যাপারে শত্রুতামূলক মনোভাব দেখিয়েছেন। এভাবে মিয়ানমারের বর্তমান সমস্যারই অংশ হয়ে উঠেছেন তিনি।’

দুই সাংবাদিকের মুক্তির পর জাতিসংঘ মঙ্গলবার এক বিবৃতে বলেছে, ‘মিয়ানমারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি এখনও শোচনীয়।’

পাঠকের মতামত